কাঁচা মরিচে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দশমিনায় মরিচ শুকাবে কৃষকরা

পটুয়াখালীর দশমিনায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু ঠিকসময় বাজারজাত করতে না পারায় লোকসান কাটিয়ে উঠতে কৃষকরা মরিচ শুকানো শুরু করেছে। মাঠ জুড়ে কাঁচা-পাকা মরিচ দেখে মনে হয় লাল-সবুজ গালিচা বিছানো, কাছে গেলে এমন ভুল ভাঙ্গবে অনেকের। বর্তমানে মাঠ জুড়ে মরিচের এমন খুশির ঝিলিক চোখে মুখে বেশে উঠে কৃষকের। বাজারে কাঁচা মরিচের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হলেও এখন অনেকেই মরিচ শুকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা।
ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে তুলে শুকিয়ে মজুদ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেকে। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে মরিচের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি মরিচের ঝাল বেশি বলে জানিয়েছেন মরিচ চাষীরা। করোনা মহামারির কারনে ঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারা এবং পাইকারের উপস্থিতি কম থাকায় এবারের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ছিল কম। তাই উৎপাদিত মরিচ শুকিয়ে মজুদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী কৃষকরা। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে গেলে মজুদ করা মরিচ উপযুক্ত দামে বিক্রি হবে- এমনটাই আশা তাদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে মিন্টু সুপার, লঙ্কা, হাইব্রীড-৬৫৩, বীজ প্লাস, সানী ও বিজলী প্লাসসহ নানা জাতের মরিচের আবাদ হয়েছে। কৃদের উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হয়ে থাকে। ক্ষেত থেকে মরিচ তুলতে নারী-পুরুষ ও শিশুরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দল বেধে গৃহবধূ ও শিশুরা গ্রামে মরিচ তোলার কাজে এখন ব্যস্ত। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা পরিবারের এ কাজে সহায়তা করছে। এছাড়া কৃষক পরিবারের বাইরেও নারী শ্রমিকরা মরিচ তোলার কাজে যুক্ত হয়েছেন। কৃষকদের তথ্যমতে, ক্ষেত থেকে যারা মরিচ তুলে আনেন তাদেরকে ৪ ভাগের ১ভাগ দিতে হয়। পানি সেচ, সার, ঔষধ, পরিচর্যা বাবদ অনেক টাকাই ব্যয় হয় সংশ্লিষ্ট কৃষকের। বাজারে বর্তমানে মূল্যে মরিচ বিক্রি করতে গেলে লোকসান গুনতে হবে বলে দাবি মরিচ চাষীদের। এজন্য বেশিরভাগ কৃষকই ন্যায্য মূল্যের আশায় মরিচ মজুদ করতে শুরু করেছেন। এদিকে, উপযুক্ত দাম না পেলে আগামিতে মরিচ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষকরা, এমন ধারণা করছেন অনেকে।
উপজেলার রনগোপালদী গ্রামের মরিচ চাষী মো. শাহ আলম জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মরিচ চাষ হয়েছে দ্বিগুন। কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে মরিচের চাষাবাদ করছেন। বিগত বছর গুলোতে ভালো ফলন ও কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় এবারে মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন অনেক কৃষক। ভাগ্য ফেরানোর আশায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন তারা। মরিচ চাষী হাবিবের মতে, ধান ও গমের মত সরকার উৎপাদিত মরিচের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে কৃষকরা লাভবান হতেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের ৫শ’ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে কাচাঁ অবস্থায় ১০/১২ টন আর পাকা শুকনো ২/৩ টন উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে এবার। একই ইউনিয়নের মরিচ চাষী সেলিম জানান, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারে তিনি বেশি জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন। এ বছরে ফলন ভালো হলেও দাম অনেক কম।
বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদুমপুর গ্রামের কৃষক মো. সুলতান ফকির জানান, তিনি প্রায় ১একর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন কিন্তু দাম কম থাকায় শুকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফর আহাম্মেদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে। আর কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়াটা জরুরী, অন্যথায় আগামীতে অনেক কৃষক মরিচ চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।